অ্যালার্জির সম্পূর্ণ সমস্যার সমাধান
অ্যালার্জিক রাইনাইটিস দুই ধরনের
অ্যাজমা রোগের উপসর্গ বা লক্ষণ হল-
আর্টিকেরিয়া : আর্টিকেরিয়ার ফলে ত্বক লালচে হয়ে ফুলে ওঠে ও চুলকায়। হাত-পা ফুলে যেতে পারে। ফোলা অংশ কয়েক ঘণ্টা স্থায়ী থাকে কিন্তু কখনও বারবার হতে পারে। যে কোনো বয়সে আর্টিকেরিয়া হতে পারে। স্বল্পস্থায়ী আর্টিকেরিয়া বাচ্চাদের এবং দীর্ঘস্থায়ী আর্টিকেরিয়া বড়দের হতে দেখা যায়।
লক্ষণ ও উপসর্গ :
* ত্বকে ছোট ছোট ফোসকা পড়ে
হাঁচি দিলে টিস্যু বা কাপর ব্যাবহার করুন
যখন হাঁচি দেবে, সমস্যা হবে, তখনই চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। এটা কিন্তু বার বার করেই হয়। যখন চিকিৎসকের কাছে যায়, চিকিৎসক কিছু ওষুধ দেয়। তখন সে কিছুদিন ভালো বোধ করে। তবে রোগী আর সেগুলো নিয়মিত করে না। এখানে প্রতিটি ওষুধই একটু দীর্ঘমেয়াদি দেয়া হয়। তবে রোগীরা কিছুদিন ওষুধ খাওয়ার পর বন্ধ করে দেয়। এই যে স্টেরয়েডগুলো, এগুলোর ক্ষেত্রে তারা মনে করে আমার অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।
একটি বিষয় হলো, ঋতুর যে একটি ক্রান্তিকাল যাবে,সেই সময়ে যদি টানা ওষুধগুলো ব্যবহার করে, তাহলে হয়তো সারা বছরই ভালো থাকবে। টানা দুই/ তিন মাস ব্যবহার করলে মোটামুটি সুরক্ষা হয়ে যায়। সমস্যাটা হয়, সে সাত দিন বা ১০ দিন ওষুধ খেল, এরপর আর খেল না। আবার হলো, আবার খেল, আবার খেল না। তাহলে হবে না। আরেকটি বিষয় এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ, জীবন যাত্রার কিছু পরিবর্তন কিন্তু আনতে হবে। হঠাৎ করে হয়তো সে শীতের বাতাস খাওয়ার জন্য বারান্দার মধ্যে দাঁড়ালো, তাহলে হবে না। তার বাসায় হয়তো কার্পেট রয়েছে, সেখান থেকে ধুলো জমে, সেটি তার জন্য বিব্রতকর। সে হয়তো ঝুল ঝাড়তে পছন্দ করে, এটা কিন্তু তার জন্য ভালো নয়। কোনো প্রাণী হয়তো বাসায় পুষছে, হয়তো তিনি জানেও না, এটা থেকে সমস্যা হচ্ছে।
আর খাবারের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, কিছু নির্দিষ্ট খাবারে সমস্যা হয়। তবে এটি ওই ব্যক্তির জন্য নির্দিষ্ট, তবে সবার জন্য সমস্যা নয়। অনেকে আছে যে বেগুণ খাবো না, গরুর মাংস খাবো না, ইলিশ মাছ খেলাম না- এমন করেন। সেটিতে দেখা যাচ্ছে অ্যালার্জি আসলে হচ্ছেই না। এই ভালো খাবার থেকে তিনি হয়তো নিজেকে বঞ্চিত করছেন। প্রথম হলো, জীবন যাত্রার পরিবর্তন করতে হবে। আরেকটি হলো সতর্ক হওয়া। যে ওষুধগুলো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেন সেগুলো একটু মেনে চলা। এই জাতীয় অসুখগুলো বিরক্তি করে। ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমা এমন একটি অসুখ যেটা মানুষকে ভোগায়। ওষুধগুলো অবশ্যই নিয়মিত করতে হবে। যতদিন বলা হয়, ততদিন খেতে হবে।
ঘরের ধুলাবালি পরিষ্কার করছেন। হঠাৎ করে হাঁচি এবং শ্বাসকষ্ট শুরু হল। ফুলের গন্ধ নিচ্ছেন বা গরুর মাংস, চিংড়ি, ইলিশ, গরুর দুধ, বেগুন খেলেই শুরু হল গা চুলকানি বা ত্বকে লাল লাল চাকা হয়ে ফুলে ওঠা। এগুলো হলে আপনার অ্যালার্জি আছে ধরে নিতে হবে।
চামড়ার ভিতরে ফোলা ফোলা মনে হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন
চুলকানি আর পীড়াদায়ক রোগের নাম অ্যালার্জিঃ
যে কোনো বয়সের মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। অ্যালার্জির কারণে অনবরত হাঁচি, নাক চুলকানো, নাক দিয়ে পানি পড়ে বা নাক বন্ধ হয়ে যায়, কারও কারও চোখ দিয়েও পানি পড়ে এবং চোখ লাল হয়ে যায়, শরীরে গোটা দেখা দেয়, সঙ্গে অস্থিরতা সৃষ্টি করে। ঘরে বা অফিসে জমে থাকা পুরনো ধুলাবালি, পরাগ রেণু, পোষা প্রাণীর পশম বা চুলের সঙ্গে নানা ধরনের ছত্রাক, ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদির কারণেও অ্যালার্জি হতে পারে। বংশগত কারণেও অনেক সময় এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কারও বাবা-মা বা ভাইবোনের এ রোগ থাকলে তার দেহেও এ রোগ সংক্রমিত হতে পারে।
আবহাওয়া বা বাতাসের আর্দ্রতার তারতম্যের কারণেও এ রোগ হতে পারে। তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের অ্যালার্জি জাতীয় খাদ্য যেমন- চিংড়ি, ইলিশ মাছ, ডিম, পাকাকলা, গরুর মাংস, বেগম, দুধ, তামাক ইত্যাদি গ্রহণ করলেও অ্যালার্জি হয়। অ্যালার্জি জনিত সমস্যা দুই ধরনের। যেমন-
সিজনাল অ্যালার্জিক রাইনাইটিস
বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে অ্যালার্জির প্রোকোপ দেখা দিলে তাকে সিজনাল অ্যালার্জিক রাইনাইটিস বলে।
পেরিনিয়াল অ্যালার্জিক রাইনাইটিস
সারা বছর ধরে হলে খুটিনাটি সমস্যাতে অ্যালার্জি দেখা দিলে তাকে পেরিনিয়াল অ্যালার্জিক রাইনাইটিস বলে।
লক্ষণ
কাশি, ঘন ঘন শ্বাসের সঙ্গে বাঁশির মতো শব্দ হওয়া বা বুকে চাপ চাপ লাগা, বাচ্চাদের ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে ঠাণ্ডা লাগা। বুকের ভেতর বাঁশির মতো সাঁই সাঁই আওয়াজ, শ্বাস নিতে ও ছাড়তে কষ্ট, দম খাটো অর্থাৎ ফুসফুস ভরে দম নিতে না পারা, ঘন ঘন কাশি, বুকে আঁটসাঁট বা দম বন্ধ ভাব, নিশ্বাসে কষ্টের কারণে রাতে ঘুম থেকে উঠে বসে থাকা সবই অ্যালার্জির কারণে হতে পারে। অ্যালার্জির কারণে ত্বক লালচে হয়ে ফুলে ওঠে ও চুলকায়। হাত-পা ফুলে যেতে পারে। ফোলা অংশ কয়েক ঘণ্টা স্থায়ী থাকে, কখনও বারবার হতে পারে।
করণীয়
অ্যালার্জির টেস্ট করে কারণ নির্ণয় করে তা পরিহার করে চলা উচিৎ। ঠাণ্ডা বাতাস, ধুলোবালি, ফুলের রেণু বা যেসব খাবারে এমন সমস্যা দেখা দেয় তা পরিহার করে চলা উচিৎ। এছাড়া ডাক্তারি পরামর্শে প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং সালবিউটামল ইনহেলার নেয়া যেতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি ভালো থাকার জন্য স্টেরয়েড ইনহেলার নেয়া যেতে পারে।
ভ্যাকসিন পদ্ধতি
উন্নত দেশগুলোতে ভ্যাকসিন পদ্ধতিতে অ্যালার্জির চিকিৎসা দেয়া হয়ে থাকে। এটা অ্যালার্জি রোগীদের দীর্ঘমেয়াদি সুস্থ থাকার চিকিৎসা পদ্ধতি। আগে ধারণা ছিল অ্যালার্জি একবার হলে আর সারে না। বর্তমানে চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। উন্নত দেশের সব প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা বর্তমানে বাংলাদেশেই রয়েছে।
লাল লা দাগ হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন
অ্যালার্জির সমস্যাকে বৃদ্ধি করে দেয় এমন সাধারণ উপাদানসমূহ
আপনি তখনই অ্যালার্জিতে ভোগেন যখন আপনার ইমিউন সিস্টেম কোন বস্তু বা উপাদানের প্রতি প্রতিক্রিয়া দেখায় যা অন্যদের ক্ষেত্রে দেখায় না। আমাদের ইমিউন সিস্টেমের কাজই হচ্ছে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ার মত বহিরাগত বস্তুকে খুঁজে বের করা এবং এদেরকে শরীর থেকে বের করে দেয়া। যাদের অ্যালার্জি আছে তাদের ক্ষেত্রে ইমিউন সিস্টেম ভুল করে অক্ষতিকর উপাদান যেমন- পরাগরেণু বা চিনাবাদামকে মারাত্মক উপাদান হিসেবে চিহ্নিত করে এবং এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য রাসায়নিক নির্গত করা শুরু করে। এর ফলেই অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়ার উপসর্গ দেখা দেয়।
বিভিন্ন জিনিস অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়াকে বাড়িয়ে দেয় এবং এটি হঠাৎ করেই বিরক্তিকর সমস্যা তৈরি করে এবং জীবনের জন্য হুমকি স্বরূপ হতে পারে। চলুন তাহলে জেনে নিই অ্যালার্জির সমস্যাকে বৃদ্ধি করে দেয় এমন সাধারণ উপাদানগুলোর বিষয়ে।
১। পরাগরেণু
বিভিন্ন উদ্ভিদ থেকে যে বিভিন্ন পরাগ উৎপন্ন হয় সেগুলো অ্যালার্জি বৃদ্ধি করে। অনেকেই একে হে ফিভার বলে। এর ফলে হাঁচি দেয়া, নাক দিয়ে পানি পড়া, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, চুলকানি এবং চোখে পানি আসার মত উপসর্গ দেখা যায়। আপনার যদি পোলেন অ্যালার্জির সমস্যা থাকে তাহলে যখন বাইরে খুব বাতাস বয় তখন ঘরের মধ্যে থাকার চেষ্টা করুন, জানালাগুলো বন্ধ রাখুন এবং এমন আবহাওয়ায় আপনার কাপড়চোপড় বাহিরে শুকাতে দেবেন না, বাহিরে যাওয়ার সময় মাস্ক ব্যবহার করুন। লবণ পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করে নিতে পারেন, অ্যান্টিহিস্টামিন সেবন করতে পারেন, স্টেরয়েড জাতীয় নাকের ড্রপ ব্যবহার করতে পারেন।
২। ডাস্ট মাইট
এটি খুবই ক্ষুদ্র জীবাণু যা অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া দেখা যায়না। এর উপসর্গগুলো পোলেন অ্যালার্জির মতোই। এরা সারাবছরই হয়, কোন একটি বিশেষ ঋতুতে নয়। আপনার যদি ধুলায় অ্যালার্জি হওয়ার সমস্যা থাকে তাহলে প্রতি সপ্তাহে আপনার বিছানার চাদর ও বালিশের কভার গরম পানি দেয়ে ধুয়ে নিন, আপনার শোবার ঘর থেকে এমন জিনিসগুলো (কার্পেট, পর্দা, পোষা প্রাণী) দূরে রাখুন যেখানে ধূলা জমতে পারে, মাস্ক ব্যবহার করুন। অ্যান্টিহিস্টামিন সেবন করতে পারেন, স্টেরয়েড জাতীয় নাকের ড্রপ ব্যবহার করতে পারেন।
৩। চিতি
চিতি ও এক ধরনের ছত্রাক যা পরাগ রেনুর মতোই বাতাসে ভেসে বেড়ায়। এরা স্যাঁতস্যাঁতে স্থানে (বাথরুম, পাতা বা ঘাসের স্তূপের নীচে) লুকিয়ে থাকে। উপসর্গ ও চিকিৎসা পরাগের অ্যালার্জির মতোই। ঘরের স্যাঁতস্যাঁতে স্থানগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করুন এবং যথাসম্ভব শুকনো রাখার চেষ্টা করুন, দেয়ালের ফাটল বা পানি চুইয়ে পড়ার স্থানটি মেরামত করুন, গাছের টবেও চিতি জমতে পারে তাই ঘরের ভেতরে টব রাখবেন না।
৪। পোষা প্রাণী এবং আরশোলা
পোষা প্রাণীর ত্বক বা লালা থেকে যে প্রোটিন নির্গত হয় তার প্রতিও আপনার অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। এ ধরনের অ্যালার্জি তৈরি হতে দুই বা তার চেয়েও বেশি বছর সময় লাগে। যদি একবার এ ধরনের অ্যালার্জির উপসর্গ দেখা যায় তাহলে প্রাণীর সংস্পর্শে না আসলেও এই উপসর্গ দীর্ঘদিন যাবৎ থেকে যায়। আর যদি আপনার বাসায় পোষা প্রাণী না থাকে তাহলে আরশোলার কারণেও হতে পারে এ ধরনের অ্যালার্জি। যদি আপনার পোষা প্রাণী থাকে তাহলে তাকে আপনার বিছানায় আসতে দেবেন না, প্রতি সপ্তাহে পোষা প্রাণীকে গোসল করান। অ্যান্টিহিস্টামিন, ডিকঞ্জেস্টেন্ট এবং নেজাল স্টেরয়েড সাহায্য করতে পারে উপসর্গ কমাতে। তেলাপোকার উপদ্রব থেকে মুক্ত থাকতে ঘর পরিষ্কার রাখুন।
৫। পোকার কামড়/ হুল ফোটানো
মৌমাছি, বোলতা, ভিমরুল, বড় পিঁপড়ার কামড়ে ব্যথা হওয়া, ফুলে যাওয়া, লাল হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু কারো কারো ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখা যায় সারা শরীরে, একে অ্যানাফাইলেক্সিস বলে। এ রকম ক্ষেত্রে জরুরী ভিত্তিতে চিকিৎসা সহায়তা নিতে হবে। যে উপসর্গগুলো দেখা দেয় তা হল – শ্বাসকষ্ট, নিঃশ্বাস ফেলতে শাঁ শাঁ করে শব্দ হওয়া। মুখ, চোখ, কান, হাত ও পা ফুলে যাওয়া, পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব, বমি বা ডায়রিয়া হওয়া এবং মাথা ঘোরানোর মত অনুভূতি হওয়া। অ্যালার্জির টিকা নিলে অ্যানাফাইলেক্সিস প্রতিরোধ করা যায়। পোকার হুলটি ভালো ভাবে সরিয়ে নিন এবং সেখানে বরফ লাগালে ব্যথা কমবে।
৬। ল্যাটেক্স
আপনার যদি ল্যাটেক্স (রাবার গাছের আঠা)এর অ্যালার্জি থাকে তাহলে ল্যাটেক্স আছে এমন জিনিস যেমন – গ্লাভস, বেলুন ইত্যাদি স্পর্শ করলেই আপনার অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া শুরু হতে পারে। এর ফলে ত্বক লাল হয়ে যাওয়া, হাঁচি দেয়া, নাক দিয়ে পানি ঝরা ইত্যাদি উপসর্গগুলো দেখা যায়।এটি খুবই বিরল।
৭। খাবার
কিছু খাবার আপনাকে বিরক্ত করতে পারে। কোন কোন শিশুর চিনাবাদামে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। দুধ, মাছ, খোলসযুক্ত মাছ, বাদাম, সয়াবিন, গম, ডিম ইত্যাদি খাবারেও অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া হতে দেখা যায় কারো কারো। কোন খাবারে আপনার সমস্যা হয় তা নির্ণয়ে আপনার চিকিৎসক সাহায্য করতে পারেন। শ্বাসকষ্ট, আমবাত, বমি, ডায়রিয়া, মুখের চারপাশ ফুলে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়।
৮। ঔষধ
কিছু নির্দিষ্ট ঔষধ যেমন- পেনিসিলিন বা অ্যাসপিরিন গ্রহণ করলে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া হতে দেখা যায়। উপসর্গ সাধারণ থেকে মারাত্মক পর্যন্ত হতে পারে। মারাত্মক ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
অ্যালার্জির সমস্যা দূর করবে যেসব খাবার
অ্যালার্জির সমস্যা দূর করবে যেসব খাবার!
অ্যালার্জি সমস্যা খুবই সাধারণ একটি শারীরিক সমস্যা। সকলেরই কমবেশী অ্যালার্জির সমস্যা থাকে। অ্যালার্জির সমস্যা মূলত বহু কিছু থেকেই হতে পারে। যেমন ডাস্ট অ্যালার্জি, কোল্ড অ্যালার্জি, অ্যালার্জি জাতীয় খাবার খাওয়ার ফলে হতে পারে ফুড অ্যালার্জি।
শারীরিক সমস্যা, অস্বস্তি এবং চুলকানি ইত্যাদী দেখা দেয়, এর জন্যে ঘরে বসেই কোন ওষুধ সেবন না করেই তাৎক্ষণিকভাবে পেতে পারেন এই অ্যালার্জি সমস্যা থেকে মুক্তি। জেনে নিন যেসব খাবারগুলো আপনার অ্যালার্জির সমস্যা কমাতে সাহায্য করবেঃ
১। গ্রিন টি
গ্রিন টি ওজন কমাতেই নয়, অ্যালার্জির সমস্যা দূর করতেও সাহায্য করে থাকে। এতে রয়েছে এন্টি-অক্সিডেন্ট, এন্টি-হিস্টাসিন। প্রদাহ বিরোধী উপাদানের জন্য অ্যালার্জিক খাবার খাওয়ার ফলে যে সকল সমস্যা দেখা দেয় তা বাঁধা দিয়ে থাকে।
২। আদা
আদা গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল এবং অ্যালার্জির সমস্যার ক্ষেত্রে খুব ভালো কাজ করে। যেকোন ব্যাথা এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট মূলক উপাদান আদাতে থাকায় বমি ভাব, মাথা ঘোরানো, হজমের সমস্যার এমনকি ডায়েরিয়ার সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে আদা কাজ করে থাকে।
৩। লেবু
লেবু হলো সাইট্রাস জাতীয় ফল যা অ্যালার্জির ক্ষেত্রে দারুণ কাজে আসে। পানি এবং মধুর সাথে লেবুর রস মেশালে শরীরের জন্য ডিটক্সিফাইং পানীয় তৈরি হয়ে যায়। নিয়মিত এই পানীয় পান করলে শরীরের টক্সিক পদার্থগুলো বের হয়ে যেতে সাহায্য করে এবং অ্যালার্জির সমস্যা দূর করতেও সাহায্য করে।
৪। ক্যাস্টর অয়েল
এলার্জি জাতীয় কোন খাবার খাওয়ার ফলে শরীরে অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিলে ক্যাস্টর অয়েল এক্ষেত্রে দারুণ কাজ করে। যদি অ্যালার্জির সমস্যা থেকে দূরে থাকতে চান তাহলে প্রতিদিন সকালে এক কাপ পরিমাণ পানিতে ৫-১০ ফোঁটা ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে খেয়ে ফেলুন।
অ্যালার্জির সমস্যা যখন নাকে
অ্যালার্জি নামক রোগটির সাথে আমরা সবাই পরিচিত। এটি মানুষের দেহের একটি যন্ত্রণাদায়ক ব্যাধি। খব কম মানুষই আছেন যারা অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হন না। তেমনি একটি অ্যালার্জি হল, নাকের অ্যালার্জি।
বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মানুষের কাছে একটি অতি পরিচিত এবং কষ্টদায়ক রোগ নাকের অ্যালার্জি। যে কোনো বয়সের মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। অ্যালার্জির কারণে হাঁচির উপদ্রব হয় এবং এক সময় তা শ্বাসকষ্টেও রূপ নিতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় নাকের অ্যালার্জিকে বলা হয়, অ্যালার্জিক রাইনাটিস। অ্যালার্জিক রাইনাটিসের অর্থ হচ্ছে, অ্যালার্জিজনিত নাকে প্রদাহ। সাধারণত অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী উপাদানগুলো মানুষের শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে শ্বাসনালিতে প্রবেশ করলে অ্যালার্জির উদ্ভব হয়। এসকল অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী পদার্থকে অ্যালার্জন বলা হয়।
কারনঃ ঘরের বাইরে রাস্তা-ঘাটে নানা ধরেনের অ্যালার্জন থাকে। প্রকৃতির মাঝে এদের অবস্থান খুবই স্বাভাবিক। আবার অনেকসময় ঋতু পরিবর্তনের কারনেও এদের পরিমান রাস্তায় বৃদ্ধি পায়। তাছাড়াও,
* ঘরে বা অফিসে জমে থাকা পুরনো ধুলাবালি, পরাগ রেণু, পোষা প্রাণীর পশম বা চুলের সাথে সাথে নানা ধরনের ছত্রাক, ভাইরাস বা ব্যাকটিরিয়া ইত্যাদির কারণেও নাকে অ্যালার্জি হয়।
* বংশগত কারণেও অনেক সময় এ রোগে আক্রান্ত হবার আশংকা থেকে থাকে। কারও বাবা-মা বা ভাইবোনের এ রোগ থাকলে তার দেহেও এ রোগ সংক্রমিত হতে পারে।
* আবহাওয়া বা বাতাসের আর্দ্রতার তারতম্যের কারণেও এ রোগ হতে পারে।
* বিভিন্ন ধরনের অ্যালার্জি জাতীয় খাদ্য যেমন : চিংড়ি, ইলিশ মাছ, ডিম, পাকাকলা, গরুর মাংস, বেগম, দুধ, তামাক ইত্যাদি গ্রহণ করলেও অ্যালার্জি হয়।
লক্ষনঃ
* সাধারনত এসময় নাক বন্ধ হয়ে যায়। কখনও এক নাক তো কখনও কখনও দুই নাকই বন্ধ হয়ে যায়। তাছাড়াও এসময় নাক দিয়ে পানি বা পানিজাতীয় পদার্থ নিঃসৃত হয়ে থাকে।
* এসময় মাত্রাতিরিক্ত হাঁচির উপক্রম হয় এবং নাকের ঘ্রাণশক্তি কমে যায়।
* কখনও কখনও মাথাব্যথা ও ঘোরা অনুভুত হয়।
* চোখ চুলকানো বা শরীরে অন্য কোনো স্থানে চুলকানি হওয়া। শরীরে জ্বর জ্বর বা ম্যাজম্যাজ ভাব হওয়াও এই রোগের লক্ষন।
চিকিৎসাঃ
এ সব রোগীর জন্য প্রথমে করণীয় হচ্ছে যে সব উপাদান অ্যালার্জির প্রকোপ বৃদ্ধি করে তা থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকা। চিকিৎসকরা এ ধরনের রোগীদের রোগের ধরন অনুযায়ী ন্যাজাল স্প্রে ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়ে থাকে। নাকের বন্ধভাব অল্প সময়ের জন্য নিরাময়ের পদ্ধতি হিসেবে নাকের ড্রপ দেওয়া হয়ে থাকে রোগীদের। তবে হার্টের রোগীদের যেকোনো ধরনের নাকের ড্রপ ব্যবহার করা উচিত নয়।
এলার্জির খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে
৭ টি খাবার এলার্জির সমস্যা কমাতে সাহায্য করবে
অ্যালার্জি সমস্যা খুবই সাধারণ একটি শারীরিক সমস্যা। কমবেশী সকলেরই অ্যালার্জির সমস্যা থাকে। মূলত অ্যালার্জির সমস্যা বহু কিছু থেকেই হতে পারে। যেমন ধুলাবালি থেকে হতে পারে ডাস্ট অ্যালার্জি, ঠাণ্ডার সমস্যা থেকে হতে পারে কোল্ড অ্যালার্জি, অ্যালার্জি জাতীয় খাবার খাওয়ার ফলে হতে পারে ফুড অ্যালার্জি। সকলে ধরণের অ্যালার্জির মধ্যে ফুড অ্যালার্জিটা সবচেয়ে বেশী মানুষের মাঝে দেখা যায়। মূলত গরুর মাংশ, ইলিশ মাছ, চিংড়ি মাছ, বেগুন, ডিম ইত্যাদি খাবারে অ্যালার্জির প্রাদুর্ভাবটা বেশী থাকে।
তবে কোরবানীর ঈদে অতো কিছু কি আর মনে থাকে! শখ করে অথবা পরিবারের চাপে সমস্যা থাকার পরেও এক দুই টুকরা কোরবানির গরুর মাংস খাওয়া হয়েই যায়। কিন্তু এরপরে যে শারীরিক সমস্যা, অস্বস্তি এবং চুলকানি দেখা দেয়, তার জন্যে ঘরে বসেই কোন ওষুধ সেবন না করেই তাৎক্ষণিকভাবে পেতে পারেন প্রতিকার।
জেনে নিন কোন খাবারগুলো আপনার অ্যালার্জির সমস্যা কমাতে সাহায্য করে আপনাকে দেবে স্বস্তি।
১/ কলা
কলার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে কমবেশী আমরা সকলেই জানি। তবে খুব দারুণ একটা ব্যপার হচ্ছে, অ্যালার্জি জাতীয় কোন খাবার খাওয়ার ফলে শরীরে তার প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে কলা খুবই উপকারী একটি খাদ্য। শরীরে লাল রঙের ছোট র্যাশ দেখা দিলে অথবা পেটের সমস্যা দেখা দিলে কলা খুবই উপকারী একটি খাদ্য। কারণ কলা শরীরের মেটাবলিজব বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে।
কলা
অতিরিক্ত পরিমাণে কলা খেলে সেটি অ্যালার্জির সমস্যা পুরোপুরি ভালো করে দেয় না, তবে শরীরে অ্যালার্জির প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে কলা খেলে অ্যালার্জির সমস্যা অতিরিক্ত হওয়া থেকে বাধা দেয়।
২/ ভিটামিন সি অথবা কমলা জাতীয় ফল
অনেক সময় পাকস্থলীতে খুব বেশী পরিমাণে প্রোটিনের আধিক্য হলেও অ্যালার্জির প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে থাকে। সেক্ষেত্রে এসিড জাতীয় খাদ্য অর্থাৎ ভিটামিন সি জাতীয় খাদ্য বেশী পরিমাণে খেতে হবে।
৩/ লেবু
লেবু হলো অন্যতম সাইট্রাস জাতীয় ফল যা অ্যালার্জির ক্ষেত্রে দারুণ কাজ করে থাকে। পানি এবং মধুর সাথে লেবুর রস মেশালে শরীরের জন্য দারুণ এক ডিটক্সিফাইং পানীয় তৈরি হয়ে যায়। নিয়মিত এই পানীয় পান করলে শরীরের টক্সিক পদার্থগুলো বের হয়ে যেতে সাহায্য করবে এবং অ্যালার্জির সমস্যা কমে আসবে।
৪/ শসা এবং গাজরের রস
কোন খাবার খাওয়ার পরে হুট করেই শরীরে অ্যালার্জির সমস্যা দেখা শসা এবং গাজরের রস একসাথে মিশিয়ে খেয়ে ফেললে খুব দ্রুত কাজে দেবে। শসা এবং গাজর দুইটি সবজীতেই এন্টি- অ্যালার্জিক উপাদান শরীরে অ্যালার্জির সমস্যাকে কমিয়ে আনতে সাহায্য করে।
৫/ আদা এবং আদা চা
আদা গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল এবং অ্যালার্জির সমস্যার ক্ষেত্রে খুব ভালো কাজে দেয়। প্রদাহজনক বিরোধী এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট মূলক উপাদান আদাতে থাকায় বমি ভাব, মাথা ঘোরানো, হজমের সমস্যার এমনকি ডায়েরিয়ার ক্ষেত্রেও খুব কাজে দেয় আদা।
আদা চা তৈরি করতে কিছু আদা কুঁচি ফুটন্ত পানিতে দিয়ে ১০ মিনিট ধরে ফুটিয়ে নিতে হবে। এরপর সেই পানি ছেঁকে নিয়ে কিছুটা আদার রস এবং মধু দিয়ে মিশিয়ে গরম গরম খেয় নিতে হবে।
৬/ ক্যাস্টর অয়েল
ক্যাস্টর অয়েল শুধুমাত্র আপনার চুলের জন্য নয়, আপনার পাকস্থলী এবং এলার্জি জাতীয় কোন খাবার খাওয়ার ফলে শরীরে অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিলেো ক্যাস্টর অয়েল দারুণ কাজ করে। অ্যালার্জির সমস্যা থেকে দূরে থাকতে চাইলে প্রতিদিন সকালে এক কাপ পরিমাণ পানিতে ৫-১০ ফোঁটা ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে খেয়ে ফেলুন।
৭/ গ্রিন টি
গ্রিন টি শুধুমাত্র ওজন কমাতেই নয় অ্যালার্জির সমস্যা কমাতেও সাহায্য করে থাকে। গ্রিন টিতে থাকা এন্টি-অক্সিডেন্ট, এন্টি-হিস্টাসিন এবং প্রদাহ বিরোধী উপাদানের জন্য অ্যালার্জিক খাবার খাওয়ার ফলে যে সকল সমস্যা দেখা দেয় তা বাঁধা দিয়ে থাকে।
অ্যালার্জির সমস্যা যাদের প্রকট তাদের জন্য অ্যালার্জি জাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকাই শ্রেয়। তবে ভুলবশত অথবা শখ করে অ্যালার্জি জাতীয় খাবার খাওয়া হয়ে গেলে দুশ্চিন্তা না করে অ্যালার্জির সমস্যা প্রতিরোধে উপরোক্ত খাবারগুলো খেয়ে ফেলার চেষ্টা করুন এবং কোরবানির ঈদের সময় জুড়ে থাকুন সুস্থ এবং নিশ্চিন্ত।
অ্যালার্জির কারণে হাঁচি: জটিলতা কী?
এ ধরনের রোগীদের একসময় গিয়ে ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমা হয়ে যায়। নাক দিয়ে এই অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হচ্ছে। নাকের শেষে কী রয়েছে? রয়েছে আমাদের ফুসফুস। কারো যদি দরজার প্রহরী আক্রান্ত হয়, তখন যদি ঘরের লোক মনে করে, ‘না, আমার তো কিছু হবে না,’ তাহলে হবে না। এটা তো দারোয়ান বা প্রহরীর ওপর দিয়ে যাচ্ছে। তাহলে ভেতরের লোকটি কি সুরক্ষিত থাকবে? একসময় সেও কিন্তু আক্রান্ত হবে। কাজেই এই নেজাল মিউকোসা যখন আক্রান্ত হবে, তখন নাকের যেসব উপসর্গ, সেগুলো দেখা যাবে। কেউ যদি এর চিকিৎসা না নেয়, তাহলে এটি কিন্তু একপর্যায়ে ফুসফুসকেও আক্রান্ত করবে। এটা তাকে আরো বেশি কষ্টের দিকে নিয়ে যাবে। এই কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়ার পথ একটাই, যখনই সমস্যা দেখা দেবে, আমরা যেন চিকিৎসকের কাছে যাই। এর কিছু ভালো চিকিৎসা কিন্তু এখন রয়েছে।